সিয়াম (বাংলা)

1 September 2025 • 22:06 0 মন্তব্য
সিয়াম (বাংলা)

এক নজরে সিয়ামঃ

 

লিখিত কোরআন পড়লে বিশেষ করে ৯ঃ১১২, ৩৩ঃ৩৫, ৬৬ঃ০৫ আয়াতগুলি থেকে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারে যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নিজেদের অজ্ঞতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থের কারনে এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানে শব্দবিভ্রাট ও অর্থবিভ্রাট করে এর মূল অন্তর্নিহীত বাস্তবতার শিক্ষা থেকে আমাদের বিভ্রান্ত করেছে।

 

সিয়ামের শিক্ষাটা লিখিত কোরআনটা খোলামনে অনুধাবন করলে বুঝা যায় যে এটা মূলতঃ পরমকর্তার বিধান সম্মন্ধে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা। এক্ষেত্রে মানুষ পরমকর্তার উপরে ঈমান আনার অব্যবহিত পরেই সিয়াম পালনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিধান সম্মন্ধে সম্মক জ্ঞান অর্জন করা যাতে সে মুত্তাকী বা পরমকর্তার বিধানে সচেতন হয়ে কুফর মুনাফেকী ও শির্কমুক্ত হয়ে মানবিক ও সাম্যের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শান্তিময় জীবন যাপন করতে পারে।

 

বর্তমানে প্রচলিত রোজা একটি ফার্সী শব্দ আর রোজা নামক রিচুয়ালের উপবাস প্রাচীন জুরাষ্টেরিয়ান রিলিজিয়ন থেকেই উৎপত্তি বলেই প্রতীয়মান।

সিয়াম বুঝার জন্য নিম্নের আয়াতগুলি মর্মার্থ সহ সন্নিবেশ করা হলঃ

 

আল-বাকারাহ 2:183
‎يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُتِبَ عَلَيْكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে যারা ঈমান আনলা! তোমাদের প্রতি সিয়াম প্রস্তাবিত করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি প্রস্তাবিত করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী/আল্লাহসচেতন হতে পার।

 

আল-বাকারাহ 2:184
‎أَيَّامًا مَّعْدُودَٰتٍۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُوا۟ خَيْرٌ لَّكُمْۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
(সিয়াম) নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে এবং সিয়ামে সক্ষমের উপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদইয়া প্রদান করা, এটা অভাবীকে অভাবমুক্ত করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশীতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরও উত্তম আর তার পরও সিয়াম পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম/কল্যানকর, যদি তোমরা বুঝ।

 

আল-বাকারাহ 2:185
‎شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٍ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا۟ ٱلْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا۟ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
গভীর চিন্তার উত্তপ্ত মুহূর্ত/কাল/সময়- কুরআনের জ্ঞান নাযিল হয়, যা লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ সময়/কাল পাবে, সে যেন তৎপরবর্তী সিয়াম পালন করে আর যে পীড়িত কিংবা সফরে থাকলে সে অব্যবহিত পরে তা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ পূর্ণ করতে পার, আর তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।

 

আল-বাকারাহ 2:186
‎وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِى عَنِّى فَإِنِّى قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لِى وَلْيُؤْمِنُوا۟ بِى لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
যখন আমার বান্দারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তো নিকটেই, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়।

 

আল-বাকারাহ 2:187
‎أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمْۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْۖ فَٱلْـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبْتَغُوا۟ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمْۚ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلْخَيْطُ ٱلْأَبْيَضُ مِنَ ٱلْخَيْطِ ٱلْأَسْوَدِ مِنَ ٱلْفَجْرِۖ ثُمَّ أَتِمُّوا۟ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيْلِۚ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَٰكِفُونَ فِى ٱلْمَسَٰجِدِۗ تِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
তোমাদের জন্য চিন্তার উত্তপ্ত কালের সিয়ামের রাতে/অমানিশায়/অন্ধকারে তোমাদের অধিন্নস্তদের সিয়ামে সম্পৃক্ত করা জায়িয করা হয়েছে, তারা তোমাদের আচ্ছাদন আর তোমরা তাদের আচ্ছাদন (তোমরা একে অপরের পরিপূরক)। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা (তাদের সম্পৃক্ত না করে মূলতঃ) নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা/প্রবন্ণ্চনা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সিয়ামে একই ধরনের বুঝে সম্পৃক্ত কর এবং খুঁজ/অনুসন্ধান/তালাশ কর আল্লাহর কিতাব তোমাদের জন্য যা কিছু তিনি বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর এবং তোমরা আহার/গ্রাস/ধারন কর ও পান/শোষন/বুঝতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা হতে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায় (অর্থাৎ আল্লাহর বিধান সমূহ দিবালোকের মত স্পষ্ট না হয়)। এভাবেই রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর, আর মাসজিদে/আল্লাহর বিধানে  ই’তিকাফ/সর্বদা লেগে থাক ও এ অবস্থায় কোন অবস্থায় সময়ের অপচয় করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই অপচয়ের নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ সুবিস্তারিত বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী/আল্লাহ সচেতন হতে পারো।

 

এছাড়াও লিখিত কোরআনে আরো কিছু আয়াত রয়েছে যেখানে সিয়াম পালনের তাগিদ রয়েছে। এই সিয়ামগুলি বিভিন্ন কৃত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট বলেই প্রতীয়মান। যদি কখনো কোন মুত্তাকী বা পরমকর্তা সচেতন ব্যক্তি তার মুত্তাকী বৈশিষ্ট হারিয়ে ফেলে, কেবল মাত্র সে ক্ষেত্রেই ঐ রকম অপরাধ সংঘটিত করতে পারে তাই তার বা তাদের শাস্তি ও সংশোধনের জন্যই পরমকর্তা পুনরায় সিয়ামের বিধান দিয়েছেন।


২ঃ১৯৬ - হজ্জ ওমরাহ তে তিন দিন ও সাত দিন সহ দশ দিনের সিয়াম।


৫ঃ৯৫ - অযাযিত ভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন অমান্য করলে বা শিকার করে ফেললে স্থানীয় আইন সহ আল্লাহর বিধান বুঝতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দিনের সিয়াম।


৪ঃ৯২ - বিশ্বাসী চিনতে না পেরে ভুল করে হত্যা করে ফেললে দুই মাসের সিয়াম।


৫ঃ৮৯ - শপথ ভংগের কাফফারার জন্য তিন দিনের সিয়াম।


৫৮ঃ০৪ - জিহারের মত অশ্লীল আহাম্মকির জন্যও দুই মাসের সিয়াম।

গবেষণা
0
জন পছন্দ করেছেন

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই