(৭) প্রকৃতির ভাষা কি সত্যিই পরমসত্যের ভাষা?
প্রকৃতির ভাষা কি সত্যিই পরমসত্যের ভাষা?
— প্রকৃতি, নৈতিকতা ও মানবচিন্তার নতুন সংলাপ
প্রকৃতির নিয়ম ও নৈতিকতার সম্পর্ক
মানুষ যখন আকাশে বজ্রপাত দেখে বা নদীর বন্যা অনুভব করে, তখন সে শুধু ভয় পায়নি, প্রশ্নও করেছে:
কে এই নিয়ম তৈরি করল? কেন এই শৃঙ্খলা?
• প্রকৃতির নিয়ম অপরিবর্তনীয়।— সূর্য প্রতিদিন ওঠে, মাধ্যাকর্ষণ সবকিছু টানে, জল সবসময় নিচে নামে।
• কিন্তু নৈতিকতার নিয়ম কি প্রকৃতির মতো স্থায়ী?— হত্যা কেন অন্যায়, বা দয়া কেন মহৎ—এসব কি কেবল সামাজিক চুক্তি, নাকি সৃষ্টির গভীরে লুকানো কোনো নীতি?
যদি প্রকৃতির ভাষা সত্যিই পরমসত্যের ভাষা হয়, তবে নৈতিকতার শিকড়ও কি প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত?
“প্রকৃতি ও পরমসত্ত্বা” বইয়ের মূল বার্তা
“প্রকৃতি ও পরমসত্ত্বা” বইটি বলছে—
• প্রকৃতি শুধু পদার্থবিদ্যার নিয়ম নয়, বরং সৃষ্টিকর্তার এক মহাজাগতিক ভাষা।
• এই ভাষা বোঝা মানে ঈশ্বরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা।
• ধর্মীয় আচার বা কুসংস্কারের বাইরে গিয়ে প্রকৃতিকে বুঝলে দেখা যায়—সৃষ্টির প্রতিটি নিয়মের ভেতরেই নৈতিকতার ইঙ্গিত আছে।
উদাহরণ:
• গাছের অক্সিজেন দান নিঃস্বার্থতার শিক্ষা দেয়।
• মৌমাছির সামাজিকতা সহযোগিতার পাঠ দেয়।
• নদীর অবিরাম প্রবাহ জীবনকে চলমান রাখার আহ্বান জানায়।
বইটির মূল প্রশ্ন: মানুষ কি এই ভাষা শুনছে, নাকি কেবল নিজের ইচ্ছার শব্দ শুনছে?
আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনের মিল
আজ বিজ্ঞান বলছে—মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
• কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা দেখাচ্ছে—কিছুই একা নয়, সবই পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।
• জীববিজ্ঞান বলছে—মানুষ প্রকৃতিরই অংশ, আলাদা কোনো “মালিক” নয়।
• দর্শন বলছে—এই আন্তঃসম্পর্কের ভেতরেই নিহিত নৈতিকতার ভিত্তি।
এখানেই বিজ্ঞান ও দর্শনের মিল:
প্রকৃতির শৃঙ্খলা যদি অবিচল সত্য হয়, তবে মানুষের নৈতিকতাও সেই শৃঙ্খলারই সম্প্রসারণ।
শেষ কথা
প্রকৃতির ভাষা সত্যিই কি পরমসত্যের ভাষা?
• যদি হ্যাঁ হয়, তবে মানুষকে সেই ভাষা পড়তে শিখতে হবে।
• ধর্ম, বিজ্ঞান ও দর্শন—সবই তখন একই স্রোতে মিশে যাবে।
প্রশ্ন রয়ে যায়—
আমরা কি প্রকৃতির পাঠশালায় শিষ্য হতে প্রস্তুত, নাকি এখনো নিজের অহংকারের পাঠশালায় বন্দী?
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই