(৯) সত্যের অনুসন্ধান: বিশ্বাস, যুক্তি ও অনিশ্চয়তার দ্বন্দ্ব

2 September 2025 • 17:36 0 মন্তব্য
(৯) সত্যের অনুসন্ধান: বিশ্বাস, যুক্তি ও অনিশ্চয়তার দ্বন্দ্ব

সত্যের অনুসন্ধান: বিশ্বাস, যুক্তি ও অনিশ্চয়তার দ্বন্দ্ব

 

— জ্ঞানতত্ত্ব, ধর্ম ও দর্শনের আলোকে মানুষের সীমাবদ্ধতা

 

সত্য কি? জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায়
 

সত্যের সংজ্ঞা ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই বিতর্কের কেন্দ্র।
 

প্রাচীন গ্রিসে সক্রেটিস ও প্লেটো বলেছিলেন—সত্য হলো অপরিবর্তনীয়, মানুষের মতামত নয়।

এরিস্টটল সত্যকে দেখেছিলেন বাস্তবতার সাথে চিন্তার মিল হিসেবে।

আধুনিক দর্শনে ডেভিড হিউম, কান্ট কিংবা ডেকার্ত সত্যকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন—

 

সত্য কি আমাদের ইন্দ্রিয়ের বাইরে কিছু? নাকি কেবল আমাদের ধারণার রূপ?

 

জ্ঞানতত্ত্ব (Epistemology) আমাদের শেখায়—

 

• আমরা সত্যকে জানি কেবল উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা এবং যুক্তির মাধ্যমে।

• কিন্তু এই প্রতিটি মাধ্যমই সীমাবদ্ধ।

• ইন্দ্রিয় ভ্রান্ত হতে পারে।

• যুক্তি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে।

• অভিজ্ঞতা ব্যক্তিনির্ভর হতে পারে।
 

দর্শনের পথ বনাম ধর্মের পথ

 

মানুষ সত্য খুঁজেছে দুই ভিন্ন পথে—

1. ধর্মের পথ — বিশ্বাস, আস্থা ও প্রকাশিত জ্ঞানের মাধ্যমে।

2. দর্শনের পথ — যুক্তি, বিশ্লেষণ ও প্রশ্নের মাধ্যমে।
 

ধর্ম বলে—সত্য এক, তা ঈশ্বরপ্রদত্ত।

দর্শন বলে—সত্য অনুসন্ধানযোগ্য, তা প্রশ্ন ও চিন্তার মাধ্যমে ধরা দেয়।

 

কিন্তু এ দুই পথের দ্বন্দ্বই মানবসভ্যতার ইতিহাসকে আন্দোলিত করেছে।

ধর্মের পথে নিশ্চিততার আশ্বাস আছে, কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ সীমিত।

দর্শনের পথে প্রশ্নের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু নিশ্চিততা নেই।

ফলাফল—মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে আস্থা বনাম সন্দেহের দ্বন্দ্ব

 

মানুষের সীমাবদ্ধতা কোথায়?

 

আমরা সত্য খুঁজতে চাই, কিন্তু—

আমাদের ইন্দ্রিয় সীমিত
 

মহাবিশ্বের অগণিত সত্য ইন্দ্রিয়ের বাইরে রয়ে গেছে।

আমাদের যুক্তি সীমিত।

 

যুক্তির ক্ষমতা আছে, কিন্তু তা আবেগ, সংস্কার ও ভ্রান্তির প্রভাবমুক্ত নয়।

আমাদের ভাষা সীমিত।
 

অনেক সত্যকে আমরা ভাষায় প্রকাশই করতে পারি না। এখানেই দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এবং অনিশ্চয়তাকে মানুষ প্রায়শই ভয় পায়—তাই সে দ্রুত বিশ্বাসে আশ্রয় নেয়, বা অন্ধ সন্দেহে ভেঙে পড়ে।

 

তাহলে পথ কী?

বিশ্বাসকে অস্বীকার নয়, প্রশ্নের আলোয় পরীক্ষা করা দরকার।

যুক্তিকে পূজা নয়, বিনয়ীভাবে ব্যবহার করতে হবে।

অনিশ্চয়তাকে শত্রু নয়, মানবজীবনের একটি প্রাকৃতিক সত্য হিসেবে মেনে নিতে হবে।


 

যেখানে ধর্ম ও দর্শন হাত মিলিয়ে চলে, সেখানে মানুষ সত্যের আরো কাছাকাছি পৌঁছায়—কারণ সত্য কোনো একপক্ষের একচেটিয়া সম্পত্তি নয়।

 

শেষ কথা
 

সত্যের অনুসন্ধান মানে নিশ্চিত উত্তর পাওয়া নয়, বরং অবিরত প্রশ্ন তোলা।

এটি এমন এক যাত্রা যেখানে বিশ্বাস ও যুক্তি—দু’টিকেই দরকার, আর অনিশ্চয়তাকেই সঙ্গী করতে হয়।

 

প্রশ্ন হলো—

আমরা কি সত্যকে খুঁজতে প্রস্তুত, নাকি কেবল নিশ্চিততার আরাম চাই?

কারণ নিশ্চিততার মোহই প্রায়শই মানুষকে ভ্রান্তির বন্দী করে ফেলে।

ব্লগ
0
জন পছন্দ করেছেন

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই