(১১) অস্তিত্বের দায়: ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানবিক পরিচয়
অস্তিত্বের দায়: ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মানবিক পরিচয়
— দায়িত্ববোধ ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন
মানুষ কেন দায়বদ্ধ?
মানুষ শুধু স্বাধীনতা চায় না; সে নৈতিকভাবেও দায়বদ্ধ।
• ব্যক্তি হিসেবে: প্রতিটি মানুষের কাজ অন্য মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে।
• সমাজের সদস্য হিসেবে: সামাজিক বন্ধন ছাড়া মানুষ পূর্ণাঙ্গ নয়।
• রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে: নাগরিক দায়িত্ব উপেক্ষা করলে স্বাধীনতাও টিকে না।
দায়বদ্ধতা আসে মানুষের বিবেক থেকে। কিন্তু আজ এই বিবেক প্রায়ই চাপা পড়ে যায়—ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতার মোহ, এবং অন্ধ মতাদর্শের ভারে।
রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা
রাষ্ট্র ও সমাজ কেবল নিয়মের কাঠামো নয়—এগুলো মানুষের মানবিক পরিচয় গড়ে তোলার উপায়।
1. সমাজের ভূমিকা:
• সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।
• অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে।
• সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তি স্থাপন করে।
2. রাষ্ট্রের ভূমিকা:
• আইন ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা করা।
• নাগরিকের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
• শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুযোগের সমান প্রবেশাধিকার দেওয়া।
কিন্তু রাষ্ট্র বা সমাজ যদি অমানবিক হয়ে ওঠে—তাহলে মানুষ নিজের দায়বদ্ধতা ভুলে যায়। একটি নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রে নাগরিকরা হয় ভীত, নয়তো উদাসীন।
মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন
মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কেমন হতে পারে?
• ন্যায়বিচারের শাসন: ক্ষমতা নয়, ন্যায় হবে রাষ্ট্রের মূলনীতি।
• মানবিক শিক্ষা: মানুষকে শুধু কর্মক্ষম নয়, বিবেকবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
• সহমর্মিতার অর্থনীতি: উন্নয়ন শুধু জিডিপি নয়, মানুষের মর্যাদা দিয়ে মাপা।
• অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে অবস্থান: ধর্ম, জাতি বা মতের নামে বিভাজন বন্ধ করা।
এটি কেবল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়—ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করলেই মানবিক ভবিষ্যৎ সম্ভব।
শেষ কথা
অস্তিত্বের দায় মানে কেবল নিজের জীবন নয়—অন্যের জীবনেও আলো ছড়ানো।
একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি যেমন সমাজকে দুর্বল করে, তেমনি অমানবিক রাষ্ট্র পুরো জাতিকে দুর্বল করে দেয়।
আমরা কি শুধু স্বাধীনতার কথা বলব,
নাকি সেই স্বাধীনতার দায়ও নেব?
কারণ দায়িত্ববোধ ছাড়া স্বাধীনতা কেবল স্বার্থপরতার ছদ্মবেশ।
আর দায়িত্ববোধই মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তোলে।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই