(১২) বিশ্ববিধান: মহাজাগতিক শৃঙ্খলা ও মানব সভ্যতা
বিশ্ববিধান: মহাজাগতিক শৃঙ্খলা ও মানব সভ্যতা
— প্রকৃতির নিয়ম কি মানুষের নৈতিকতার মানদণ্ড হতে পারে?
প্রকৃতির নিয়ম কি মানব জীবনের মাপকাঠি?
প্রকৃতি এক আশ্চর্য শৃঙ্খলায় বাঁধা। সূর্য প্রতিদিন ওঠে, গ্রহগুলো নির্দিষ্ট পথে ঘোরে, বীজ মাটিতে পড়লে গাছ হয়—কোনো কিছুই এলোমেলো নয়।
• প্রকৃতিতে অরাজকতা নেই, আছে কঠোর নিয়ম।
• মানুষও এই নিয়মের অংশ, কিন্তু সে চায় স্বাধীনতা এবং নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন।
প্রশ্ন হলো—মানুষ কি প্রকৃতির মতোই একটি নৈতিক শৃঙ্খলার অধীন?
যদি প্রকৃতির নিয়ম মানতে হয়, তবে মানব আচরণেরও কি এমন কিছু অপরিবর্তনীয় নীতি থাকা উচিত যা সকল কাল ও সমাজে প্রযোজ্য?
“বিশ্ববিধান” বইয়ের মূল ধারণা
“বিশ্ববিধান” বইটি দেখায়—
1. মহাবিশ্বের প্রতিটি কণায় একটি ঐক্যবদ্ধ আইন কাজ 2. এই আইন শুধু পদার্থজগৎ নয়, মানবজীবনকেও প্রভাবিত করে।
3. মানুষ যদি প্রকৃতির এই শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারে, তবে তার ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ এবং রাষ্ট্র আরও সুসংগঠিত হবে।
বইটির মূল বার্তা হলো—নৈতিকতার মূল উৎস প্রকৃতির অন্তর্নিহিত শৃঙ্খলা।
যেমন:
• সত্য ও ন্যায় মহাজাগতিক সত্য, কোনো ধর্ম বা মতবাদের একচেটিয়া সম্পদ নয়।
• অসত্য, ভণ্ডামি বা অবিচার প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ—যার ফল অবশ্যম্ভাবী ধ্বংস।
নৈতিকতার সার্বজনীন নীতি
মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়—যখন মানুষ প্রকৃতির শৃঙ্খলা ভেঙে অহংকারে মত্ত হয়েছে, তখন সভ্যতা ধ্বংসের পথে গেছে।
• রোমান সাম্রাজ্য পতন—নৈতিক অবক্ষয়ের ফল।
• শিল্প বিপ্লবের দূষণ—প্রকৃতির নিয়ম ভাঙার ফল।
• আজকের জলবায়ু সংকট—মানবলোভের পরিণতি।
সুতরাং কিছু নীতি সর্বজনীন:
1. সামঞ্জস্যের নীতি: প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা।
2. ন্যায়ের নীতি: কারও অধিকার হরণ না করা।
3. দায়িত্বের নীতি: ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে বৃহত্তর কল্যাণ দেখা।
এই নীতিগুলো ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ভেদাভেদ অতিক্রম করে মানবতার অভিন্ন মাপকাঠি হিসেবে দাঁড়ায়।
শেষ কথা
বিশ্ববিধান মানে শুধু পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নয়—এটি এক সার্বজনীন নৈতিক সত্য।
প্রকৃতি আমাদের শেখায়, শৃঙ্খলা ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়।
যদি আমরা প্রকৃতির শৃঙ্খলার সঙ্গে মানবজীবনের শৃঙ্খলাকে মিলিয়ে নিতে পারি, তবে ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে বিশ্বসভ্যতা পর্যন্ত সবকিছু আরও ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই হবে।
প্রশ্ন হলো—আমরা কি প্রকৃতির এই ভাষা শিখতে প্রস্তুত?
নাকি সভ্যতার অহংকারে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাব?
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই